ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি: জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়ন কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে।
বিধ্বস্ত হয়েছে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পরিবারের বসতবাড়ি। শিশুসহ আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। উপড়ে পড়েছে গাছপালা ও ৩৩ কেভির বৈদ্যুতিক ১২টি খুঁটি। কালবৈশাখী ঝড়ে ধানসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
উপজেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। শেষ হয় রাত ১০টার দিকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ইসলামপুর সদর, পার্থশী, চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, পলবান্ধা, গাইবান্ধা ইউনিয়ন, সাপধরী ও পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকার বসতবাড়ি, ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দেখা যায়, ঘরের উপর পড়ে যাওয়া কেউ গাছ কাটছেন, কেউ আবার ঘরের উড়ে যাওয়া টিন কুড়াচ্ছেন। আবার কেউ ভাঙা ঘরের আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকের ঘরের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। যা এখন পর্যন্ত খোজে পাওয়া যায় নি।
পৌর শহরের মধ্য দরিয়াবাদ এলাকার মো: নাগর আলী জানান, গত রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে আমার সবকিছু মুহর্তের মধ্যে শেষ। আমার ঘরবাড়ি আসবাবপত্র বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এখন্ আমি খোলা আকাশে নিচে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছি।
সোনালী ব্যাংকের অফিস সহায়ক ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, আমি একজন গরীব অসহায় মানুষ। সোনালী ব্যাংকে অস্থায়ী অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকি। কালবৈশাখী ঝড়ে আমার বাড়িঘর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
দক্ষিণ কিংজাল্লা গ্রামের আবু হাসেম দুদু মিয়া জানান, হঠাৎ করেই ঝড়ের তান্ডব শুরু হলে আমার থাকার ঘরের উপর তিনটি গাছ উপড়ে পড়ে। ঘরের ভেতরে আমিসহ পরিবারের ৫ সদস্য আটকা পড়ি। পরে মোবাইল ফোনে আমার বড় ছেলেকে জানাইলে সে এসে আমাদের উদ্ধার করে। এতে আমার নাতি দু’জনই আহত হলে একজনকে সাতটি ও নাতনীকে তিনটি সেলাই দেয়া হয়েছে’।
সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সায়েদ আলী জানান, আমার এলাকা কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমার নিজের থাকার একটি ঘর বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেছে।
সাপধরী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ সবুজ মিয়া জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে দূর্গম চরাঞ্চল সাপধরী ইউনিয়নে উঠতি ফসল পাট, ঘরবাড়ি, গাছপালা, পশুপ্রাণীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । এছাড়া অনেকেই আহত হয়েছে।
পার্থশী ইউনিয়নের পশ্চিম ঢেংগারঘর গ্রামের মেছের আলী জানান, ‘আমার জীবনেও এরকম ঝড় দেখি নাই। মুহুর্তের মধ্যেই আমার দুটি ঘর লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ঘরের চাল এদিকে উপড়ে যায় আর আমি আরেকদিকে পড়ে যায়। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।
ওই এলাকার সুজন সেখ জানান, ‘ঝড়ে মুহুর্তের মধ্যেই সবকিছু লন্ডভন্ড করে ফেলে। আমার বাড়িতে বসবাস করার মতো ঘর নেই। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছি’।
পৌরশহরের ৪নং ওয়ার্ড কমিশনার ও প্যানেল মেয়র খুরশেদুজ্জামান লেবু মিয়া জানান, ‘শুধু আমার ওয়ার্ডেই প্রায় তিনশ পরিবারের বসতবাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে। আরও বাড়বে তালিকা করা হচ্ছে।’
পার্থশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতেখার আলম বাবুল বলেন,’ ঝড়ে আমার ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে’।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.আজিজ আহমেদ বলেন, ‘ঝড়ে আহত হওয়া ২৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও গুরুতর আহত অবস্থায় ৬জনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও দুর্যোগ ত্রাণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে পৌরশহরসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এখনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি’।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. তানভীর হাসান রুমান বলেন, ‘সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শন করছি। আপনাদের সঠিক তথ্য পড়ে জানাতে পারবো’।