জেলা প্রতিনিধিঃ মোবাইল ফোন চুরি হওয়া বা ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এমন ঘটলে ফোনের সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত চিরদিনের মতো হারিয়ে যায়। ব্যক্তিগত গোপনীয় অনেক তথ্যও তখন অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ফোন হারিয়ে বিপাকে পড়ে পুলিশের সহযোগিতা নেন অনেকে। এ ধরনের বিপদগ্রস্ত মানুষের ফোন উদ্ধার করে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছেন হবিগঞ্জের বাহুবল মডেল থানার পুলিশ সদস্য কম্পিউটার অপারেটর রিয়াজ উদ্দিন। কাজটিকে তিনি প্রায় শখের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। হারানো ফোন খুঁজে বের করার এই চ্যালেঞ্জ জয় করা তিনি দায়িত্ব বলে মনে করেন।
১৯৯৪ সালে চাঁদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন রিয়াজ উদ্দিন। চিতোষী ডিগ্রী কলেজ, শাহরাস্তি থানা, চাঁদপুর জেলা কলেজ থেকে বিএসএস(বিএ)পাস করেণ। বর্তমানে কুমিল্লা ল কলেজে এলএলবিতে অধ্যায়নরত। বাংলাদেশ পুলিশে ২০১২ সালে ট্রেনিং সম্পন্ন করে ২০১৩ সালে কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। ১২/১০/২০২০ সালে বদলি হয়ে বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জের বাহুবল মডেল থানায় কর্মরত রয়েছেন।
রিয়াজ মোরর্শেদ প্রায় দুই শতাধিক এর অধিক হারিয়ে যাওয়া, চুরি হওয়া বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করে মালিকের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এই কাজ তার মনে প্রশান্তি জোগায়। মানুষের উপকার করে পরম তৃপ্তি পাওয়া যায় বলেই আনন্দ নিয়ে এ কাজ করেন তিনি।
সেই থেকে থানায় হারানো ফোন খুঁজে দেওয়ার অনুরোধ এলেই ডাক পড়ে রিয়াজ উদ্দিন। রিয়াজ উদ্দিন ও আনন্দে সেই ডাকে সাড়া দেন। আর এভাবেই ফোন হারানো মানুষের কাছে তিনি ‘সুপার হিরো’ হয়ে উঠেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদিনই প্রশংসায় ভাসেন এই পুলিশ সদস্য।
রিয়াজ উদ্দিন বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। তারপরও তারা পেশাদার। অভিযোগ পেলে হারানো বা খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধারে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করেন। তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ও আইএমই নম্বর সার্চ করে তিনি অনেক মোবাইল ফোন উদ্ধার করে দিয়েছেন।‘হারানো ফোন ফিরে পেলে মানুষ যতটা খুশি হয় তা আমার জন্য পরম আনন্দের। আমি সব সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটলে গুরুত্ব দেই। সর্বোচ্চ চেষ্টা করি ফোন খুঁজে দেওয়ার।’
হারানো ফোন ফিরে পেয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাহুবল মডেল থানার কম্পিউটার অপারেটর রিয়াজ উদ্দিন এর প্রশংসা করেছেন। তেমনই কয়েক হারানো মোবাইলের মালিক বলেন ‘হারানো মোবাইল খুঁজে আসল মালিকের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিখ্যাত ‘মোবাইল জাদুকর হিসাবে পরিচিত পুলিশ সদস্য কম্পিউটার অপারেটর ‘রিয়াজ উদ্দিন’ আমাদের প্রায় প্রতি ফ্যামিলিতে একটি পরিচিত নাম! কয়েক মাস আগে হারিয়ে যাওয়া ফোনটি আজ তিনি আমাদের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তার জন্য যে কোনো বিশেষণ কম হয়ে যাবে। ধন্যবাদ রিয়াজ উদ্দিন ভাই।’
নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হারানো ফোন ফিরে পেয়ে বলেন, ‘আমার মোবাইল ফোনটি হারিয়ে গেলে রিয়াজ উদ্দিন কম্পিউটার অপারেটর এর সঙ্গে পরিচয়। তিন কয়েক দিনের মাথায় আমার মোবাইল উদ্ধার করে দেন তিনি। একজন সৎ পুলিশের বড় উদাহরণ তিনি।’
পুলিশের বিভিন্ন কাজ থাকতে হারানো ফোন উদ্ধারের কাজ কেন বেঁচে নিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়াজ উদ্দিন অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন- ‘কিছু কিছু সময় অন্যের জন্য কিছু করতে পারলে নিজের আনন্দটাই বেশি লাগে। জীবনের আসল মানেটা তখনই ফুটে ওঠে যখন আপনি অন্যের উপকার করার মাঝে নিজের সুখ খুঁজে পান।’
এ ব্যাপারে বাহুবল মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) প্রজিত কুমার দাস বলেন, বাহুবল মডেল থানা-পুলিশ গত এক মাসে প্রায় ১০ টি হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে। এসব মোবাইল ফোন ফিরে পেয়ে মানুষজন অবাক ও খুশি হন। পুলিশের এই তৎপরতা আরও গতিশীল করা হবে।