মঙ্গলবার | ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দৈনিক পাবলিক বাংলা বিশ্বজুড়ে বাঙলার মুখপত্র
বিশ্বজুড়ে বাঙলার মুখপত্র

ফজল উদ্দিন, ছাতক :

ছাতকে সরকারি ভূমি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা

ছাতকে সরকারি ভূমি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা

ফজল উদ্দিন ছাতক প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে এক টুকরো সরকারি ভূমি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে যে কোন সময় দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্খা করছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের জাহিদপুর গ্রামের জাহিদপুর মৌজার জেএল নং-৪৪৮ আরএস ৪৪৬ খতিয়ান নং-এসএ ১, আরএস ৩১১৮, দাগ নং-৩৮১০ ও আরএস ৪৬৫২, শ্রেনি-সাবেক লায়েক পতিত ভূমি। এটি খেলার মাঠ হলেও কিছু অংশে পুকুর, বাজার, দোকানপাঠ, হাফিজিয়া মাদরাসা ও পুলিশ ফাঁড়ি মিলিয়ে ৩.২৭ একর ভূমি রয়েছে। এই মাঠটিতে প্রায় দুইশ বছরের বেশি সময় ধরে এলাকারবাসী খেলাধুলা ও সামাজিক অনুষ্ঠানসহ নানা কাজে ব্যবহার করে আসছিলেন। কিন্তু ২০০১ সালে এই মাঠের এক একর ভূমি বন্দোবস্ত আনেন পার্শ্ববর্তী ভাতগাঁও ইউনিয়নের বরাটুকা গ্রামের মহেশ রঞ্জন বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি। ভূমিহীন পরিবার দেখিয়ে তিনি এ বন্দোবস্ত আনলেও পরবর্তীতে জাহিদপুর গ্রামের পঞ্চায়েতির প্রয়োজনে দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে মহেশ রঞ্জন বিশ্বাস ভূমি বিক্রয় করেন।

দীর্ঘদিন ধরে যখন গ্রামের পঞ্চায়েত সরকারি ভূমি ব্যবহার করে আসছিলেন ঠিক তখনি একটি চক্র বেশ তৎপর হয়ে উঠে। জাহিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাহিদপুর দাখিল মাদরাসা, জাহিদপুর মহিলা হাফিজিয়া মাদরাসাসহ গ্রাম পঞ্চায়েত লোকজনকে উপেক্ষা করে ২০১৯ সালে ভূমিহীন পরিবার দেখিয়ে খেলার মাঠের অবশিষ্ট কিছু অংশ সুজন মিয়া, মফিজ আলী ও রুফেজা বেগমের নামে বন্দোবস্ত আনা হয়। অভিযোগ উঠেছে, শর্ত ভঙ্গ ও নিজেদের তথ্য গোপন করে তারা সকলেই এই ভূমির বন্দোবস্ত গ্রহণ করে শান্তিপ্রিয় গ্রামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাহিদপুর গ্রামের কাঁচা মিয়ার বিদেশ ফেরত পুত্র সুজন মিয়া। তার নামে রয়েছে ৩৮০১ ও ৩৮১০ দুই দাগে ৬০ শতক সরকারি ভূমি। সুজন মিয়ার পিতার নামে সরকারি ১.২০ শতক ভূমি বন্দোবস্তও রয়েছে। অথচ তার পরিবারের একাধিক সদস্যরা বসবাস করছেন ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। মারফত আলীর পুত্র মফিজ আলীর নামে নতূন করে সরকারি ৬০ শতক ভূমি বন্দোবস্ত রয়েছে। তার পিতা মারফত আলীর নামেও বন্দোবস্ত রয়েছে সরকারি ৭৫ শতক ভূমি। এছাড়া মফিজ আলীর এক পুত্র ফ্রান্সে ও এক কন্যা যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।
এছাড়া মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আলীর স্ত্রী রুফেজা বেগম এর নামে নতূন রয়েছে সরকারি ৫০ শতক ভূমি। তার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আলীর নামেও রয়েছে সরকারি ১ একর ৫০ শতক ভূমি। তাদের পরিবারের একাধিক সদস্যরা রয়েছেন সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে। সকলের বাড়িঘরও পাকা দালান। এদিকে, বন্দোবস্ত গ্রহীতা সুজন মিয়ার বড় ভাই সাবেক মেম্বার আবুল খয়েরের নামেও ৩৮০১ দাগে ৩০ শতক ভূমি বন্দোবস্ত আছে। এ ভূমি বিক্রি নিয়ে দু’পক্ষও জেল কেটেছেন।

জাহিদপুর গ্রামের মুরব্বি আলমাছ আলী ও আবদুল জলিল, দবির মিয়া, জমির আলী, তোফায়েল, মাসুক আহমদসহ মাঝপাড়া পঞ্চায়েতের একাধিক লোকজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় দুই শত বছর আগ থেকে গ্রামের পূর্ব পুরুষরা এ মাঠে খেলাধুলা, সামাজিক অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল করে আসছিলেন। গ্রামবাসীকে উপেক্ষা করে দেওয়া সরকারি ভূমির বন্দোবস্তগুলো বাতিল করে গ্রাম পঞ্চায়েতসহ সর্ব সাধারণের ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তারা জোর দাবি জানান।

দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে জাহিদপুর গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষে ধন মিয়া মহালদারের কাছে বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে মহেশ রঞ্জন বিশ্বাসের কন্যা মঞ্জুরানী বলেন, ভূমি বন্দোবস্ত আনার পর ওই মাঠে তিনি পাকা পিলার স্থাপন করেছিলেন। ২০০৮ সালে ওই পাকা পিলার ভেঙ্গে ধন মিয়া তার লোকজন কর্তৃক জোরপূর্বক এখান থেকে মাটি বিক্রি করেছেন। ওই মাটি তার বাড়ির রাস্তায় এবং দোকান ভিটেও ফেলেছেন।

সুজন মিয়া, মফিজ আলী ও রুফেজা বলেন, তারা সকলেই ভূমিহীন পরিবার। প্রবাসী যারা আছেন তারা পৃথক পরিবারের সদস্য। সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে তাদেরকে ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। তারা মাছ চাষ করে ভোগ দখলে আছেন।

জাহিদপুর গ্রামের সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী ধন মিয়া মহালদার বলেন, পূর্ব পুরুষদের খেলার মাঠ মহেশ রঞ্জন অন্য ইউনিয়নের বাসিন্দা হয়ে জাহিদপুর পঞ্চায়েতের এক একর জায়গা বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। সম্প্রতি দুই লাখ টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে আমরা জায়গা এনেছি এবং আমাদের পঞ্চায়েতের দখলেও আছে। এখানে আমরা মাছ চাষ করেছি। সম্প্রতি আমাদের গ্রামের একাধিক স্বচ্ছ পরিবার ভূমিহীন পরিবার দেখিয়ে তথ্য গোপন করে নতূন করে কিছু সরকারি জায়গা বন্দোবস্ত এনেছেন। এরা এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। তিনি বলেন পঞ্চায়েতের লোকজনের দাবি এসব বন্দোবস্ত বাতিল করে ওই মাঠের পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ফাঁড়িসহ গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকজনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। এ জায়গাগুলো পঞ্চায়েতের খুব প্রয়োজন। এছাড়া অনেক প্রবাসীরা ওই মাঠে ঈদগাহ অথবা মিনি স্টেডিয়াম স্থাপন করতে ইতোমধ্যেই মতামত দিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু কার্যত কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ইসলাম উদ্দিন বলেন, জাহিদপুরের পতিত জমি কয়েকজনকে লীজ দেওয়া হয়েছে বলে বিষয়টি শুনেছি। স্থানীয় কয়েকজন লীজ বাতিলের জন্য মৌখিক ভাবে আমাকে বলেছেন। শর্ত ভঙ্গ করে লীজ নেওয়া হলে এবিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মতামত দিন

Posted ৮:২৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০  
ড. সৈয়দ রনো   উপদেষ্টা সম্পাদক   
শাহ্ বোরহান মেহেদী, সম্পাদক ও প্রকাশক
গোলাম রব্বানী   নির্বাহী সম্পাদক   
,
ঢাক অফিস :

২২, ইন্দারা রোড (তৃতীয় তলা), ফার্মগেট, তেজগাও, ঢাকা-১২১৫।

নরসিংদী অফিস : পাইকসা মেহেদী ভিলা, ঘোড়াশাল, নরসিংদী। ফোনঃ +8801865610720

ই-মেইল: news@doinikpublicbangla.com