সোমবার | ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দৈনিক পাবলিক বাংলা বিশ্বজুড়ে বাঙলার মুখপত্র
বিশ্বজুড়ে বাঙলার মুখপত্র

আধুনিকতার ছোঁয়ায় স্টিল,মেলামাইনের সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে কাঁসা শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে

ফেরদৌস সিহানুক শান্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ :

আধুনিকতার ছোঁয়ায় স্টিল,মেলামাইনের সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে কাঁসা শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে

ফেরদৌস সিহানুক শান্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ
এক দশক আগেও কাঁসার থালা-বাটি ছিল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ, বাংলার প্রাচীনতম শিল্পের মধ্যে কাঁসাশিল্প একটি। তবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় স্টিল, মেলামাইন, অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের কথা, যেখানে এ শিল্পের বয়স ৩০০ থেকে ৪০০ বছর অতিক্রম করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় আট হাজার কেজি কাঁসার বিভিন্ন সামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে। যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ২ হাজার কেজি পিতলের সামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে, যার আনুমানিক মূল্য ৩২ লাখ টাকা। এ ছাড়া তামার তৈরি জিনিস উৎপাদিত হয় প্রায় ৫০০ কেজি, যার মূল্য সাড়ে তিন লাখ টাকা।
করোনার কারণে বিদেশ থেকে আমদানিনির্ভর কাঁচামাল না আসায় দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কাঁসা-পিতলের তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্রের দাম বেড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও। ফলে আগ্রহ হারাচ্ছেন ক্রেতা ও সারাদেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ভাংড়ির দাম করোনার আগে ছিল ৭০০ টাকা কেজি। কিন্তু এখন তা ১৪০০ টাকা কেজি। ১৮০০ টাকা কেজির রাং এখন ৩৬০০ টাকা। কাঁসার তৈরি থালার বর্তমান দাম কেজি প্রতি ২০০০ থেকে ২১০০ টাকা এবং গ্লাস, বাটির দাম ২৩০০ থেকে ২৪০০ টাকা কেজি। যেগুলো কেজি প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে দাম বেড়েছে।
কাঁসা ছাড়াও পিতলের তৈরি তৈজসপত্র প্রতি কেজির মূল্য ৭০০ টাকা। এ ছাড়া তামার তৈরি তৈজসপত্র প্রতি কেজির মূল্য ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এখানের তৈরি তৈজসপত্র জেলা ছাড়াও রাজশাহী নওগাঁ, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।
তবে করোনার কারণে বিদেশ থেকে আমদানিনির্ভর কাঁচামাল না আসায় দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কাঁসা-পিতলের তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্রের দাম বেড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও। ফলে আগ্রহ হারাচ্ছেন ক্রেতা ও সারাদেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
আগে কাজ করে ভালো টাকাপয়সা পেতাম। দিন দিন তা কমছে। তবে করোনা এসে একেবারেই ধ্বংস হওয়ার মতো অবস্থা। কাজ না থাকায় সংসার চালার তাগিদে অনেকেই এই কাজ ছেড়ে দিয়েছে। এখন তারা কাজ ছেড়ে কেউ রিকশা-ভ্যান চালায়, কেউ যোগ দিয়েছে রাজমিস্ত্রির কাজে, কেউ আবার পাড়ি দিয়েছে প্রবাসে।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, কাঁসা ও পিতলের ব্যবহার জনপ্রিয়তা অর্জন করে মোঘল আমলে। এসব ধাতু দিয়ে ঢাল, তলোয়ার, তির-ধনুক, বন্দুক, কামান পর্যন্ত তৈরি করা হতো তখন। এরপর ধীরে ধীরে কাঁসা দিয়ে দৈনন্দিন নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি করা শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আজাইপুর, আরামবাগ, নামোশংকরবাটি, শান্তিমোড়ে আজ কার্যত অস্তিত্ব সংকটে নেমে পড়েছে কাঁসাশিল্প।
একসময় এ শিল্প থেকেই এসব এলাকার বহু বাসিন্দা তাদের সংসার চালাতেন। তবে বর্তমানে কাঁসার চাহিদা ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ায় কারিগর ও ব্যবসায়ীরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এসেছে করোনাভাইরাস।
কারিগর, কারখানা মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার আগে খুঁড়িয়ে চলছিল বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী শিল্প। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতি শুরু হলে বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরির মূল উপাদান তামা ও রিং বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে কাঁসা-পিতলশিল্পের কাঁচামালের। তাই প্রস্তুতকৃত জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে দ্বিগুণ।

অন্যদিকে, লকডাউনের কারণে কারখানা ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে তারা। সংসার চালাতে কয়েক দশকের পেশা ছেড়েছেন অনেকেই। জেলা শহরের আজাইপুর, আরামবাগ, নামোশংকরবাটি, শান্তিমোড়, রামকৃষ্টপুর মহল্লার প্রতিটি অলিগলিতে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শোনা যেত খটখট শব্দ। তবে এখন হাতে গোনা কয়েকটি কারখানা রয়েছে। যারা ধরে রেখেছে বাপ-দাদার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে।
কাঁচামালের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় খুব বিপদে আছি। সরকার বিদেশ থেকে এসব আমদানি করতে উদ্যোগ নিলে দুবেলা দুমুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারব। তা না হলে অন্যদের মতো আমাদেরও এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে।
৩৫ বছর ধরে কাঁসা-পিতলের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন রামকৃষ্টপুর এলাকার মেহের আলী (৫৫)। তিনি বলেন, আগে কাজ করে ভালো টাকাপয়সা পেতাম। দিন দিন তা কমছে। তবে করোনা এসে একেবারেই ধ্বংস হওয়ার মতো অবস্থা। কাজ না থাকায় সংসার চালার তাগিদে অনেকেই এই কাজ ছেড়ে দিয়েছে। এখন তারা কাজ ছেড়ে কেউ রিকশা-ভ্যান চালায়, কেউ যোগ দিয়েছে রাজমিস্ত্রির কাজে, কেউ আবার পাড়ি দিয়েছে প্রবাসে।
শ্রমিক সারিউল ইসলাম জানান, করোনা শুরুর পর থেকে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। সংসার চালানোয় মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। একদিন কাজ করলে দুই দিন হয় না। আবার দুই দিন কাজ করলে, পরের ৩ দিন বসে থাকতে হয়। লকডাউনে ঘরে বসে থাকলেও সরকার কোনো অনুদান দেয়নি। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা নিয়েছে, কিন্তু কোনো সহায়তা পাইনি।
কাঁসা-পিতলের বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরির কাজ করেন রাসেল আলী। তিনি বলেন, এই শিল্পের মূল কাঁচামাল রাং আসে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন থেকে আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে দ্বিগুণ দাম বেড়েছে এই কাঁচামালের। স্বাভাবিকভাবে তৈরিকৃত পণ্যের দামও বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে তা ছাড়া এখন আর কাঁসার তৈরি জিনিসপত্র কেউ নিতে চায় না।
৩ দশকের বেশি সময় ধরে কাঁসা-পিতলের ব্যবসা করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রামকৃষ্টপুর এলাকার আবুল খায়ের। তিনি বলেন, প্রায় বছরখানেক বন্ধ থাকার পর কোনরকমে আবার কারখানা চালু করেছি। কাঁচামালের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় খুব বিপদে আছি। সরকার বিদেশ থেকে এসব আমদানি করতে উদ্যোগ নিলে দুবেলা দুমুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারব। তা না হলে অন্যদের মতো আমাদেরও এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে।
কাঁসাশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিশেষ প্রণোদনা অথবা কাঁচামাল আমদানিতে বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি সরকারকে পাশে দাঁড়াতে হবে।
প্রায় ১৫ বছর পর এবছর নতুন করে বাপ-দাদার ব্যবসা শুরু ক

আপনার মতামত দিন

Posted ৩:৩৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৭ জুলাই ২০২১

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

ড. সৈয়দ রনো   উপদেষ্টা সম্পাদক   
শাহ্ বোরহান মেহেদী, সম্পাদক ও প্রকাশক
গোলাম রব্বানী   নির্বাহী সম্পাদক   
,
ঢাক অফিস :

২২, ইন্দারা রোড (তৃতীয় তলা), ফার্মগেট, তেজগাও, ঢাকা-১২১৫।

নরসিংদী অফিস : পাইকসা মেহেদী ভিলা, ঘোড়াশাল, নরসিংদী। ফোনঃ +8801865610720

ই-মেইল: news@doinikpublicbangla.com