শমিত জামান, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট :
মুক্তির পথ তৈরির জন্য নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন
ছয় দফা ঘোষণার পরবর্তী পরিস্থিতিতে, গ্রেফতার এড়াতে আওয়ামী লীগের অনেকেসহ অন্যান্য দলের নেতারা একটা রাজনৈতিক কর্মসূচিহীন জোট (পিডিএম) গঠন করেন। এমনকি তারা আট দফা ঘোষণা করে ছয় দফার জাগরণকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা চালান। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ডাকা হয় এবং কয়েকজন বাদে বাকি সবাই এই জোটে যোগ দেওয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেন। এরপর শেখ মুজিবুর রহমানকে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আবুল হাসনাত মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক গতিপ্রবাহ নিশ্চিত করা হয়।
আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক এই ছয় দফার পরপরই বাংলার রাজনীতির গতিপথ বদলে যায়। তৎকালীন অন্যান্য বর্ষীয়ান নেতারা বাংলার সাধারণ মানুষের আবেগ ও আকাঙ্ক্ষা বুঝতে ব্যর্থ হন। শুধু শেখ মুজিবের ছয় দফার বিরোধিতা করায়, ভারতবর্ষের বৃহত্তর পরিসরে জননেতা হয়ে ওঠা অনেক পুরনো নেতার ক্যারিশমাও জনরোষের স্রোতে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। বাঙালির মনন ও মগজের মণিকোঠায় মহান নেতা হিসেবে একচ্ছত্র জায়গা দখল করে নেন শেখ মুজিবুর রহমান। ছয় দফা হয়ে ওঠে বাঙালির প্রাণ এবং শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির একমাত্র কণ্ঠস্বর। আর আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে স্বাধীনতার অমিয় স্বাদ এনে দেওয়ার মতো একটি মাত্র দল। কারণ ছয় দফায় ছয়টি দাবি থাকলেও মূল দাবি আসলে ছিল একটি, আর সেটি হলো বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তি।
এই ছয় দফা ঘোষণার পর পূর্ব-পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আরে মিয়া বুঝলা না, দফা তো একটাই। একটু ঘুরাইয়া কইলাম।’ ছয় দফার প্রথম দুই দফায় রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন ও পরের চার দফায় অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলা হলেও, এটি আসলে ছিল বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত দাবি। যার ওপর ভিত্তি করেই ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের একমাত্র জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ।
( লেখকঃ- শমিত জামান সাংবাদিক কলামিস্ট)
Posted ১০:৪৮ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৩ জুন ২০২১